কুরবানীর একাংশে আক্বীকা দেওয়া প্রসঙ্গ
লেখক: শাইখ আব্দুর রাকীব (মাদানী)
সম্পাদক: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
আল্ হামদুলিল্লাহি রাব্বিল্ আলামীন, ওয়াস্ স্বালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিহিল্ কারীম। আম্মা বাদঃ
অতঃপর কুরবানীর সময় আমরা আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত আমল দেখতে পাই, তা হচ্ছে, গরু কিংবা উট কুরবানী দেয়ার সময় তাতে সন্তানের আক্বীকা দেওয়া। বিষয়টির ব্যাখ্যা এই রকম যে, যেহেতু একটি গরু কিংবা উটে সাতটি ভাগ প্রমাণিত। অর্থাৎ সাত ব্যক্তি শরীক হয়ে কুরবানী দিতে পারে এবং সেটি সাত জনের পক্ষে স্বীকৃত। তাই কোন কুরবানীদাতা যদি কুরবানীর উদ্দেশ্যে একটি গরু বা উট ক্রয় করে, অতঃপর তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদি ৪ কিংবা ৫ কিংবা ৬য় হয়, তাহলে সে অতিরিক্ত ভাগগুলিতে কুরবানীর নিয়ত না করে সেই সকল সন্তানের আক্বীকার নিয়ত করে, যাদের সে নির্দিষ্ট সময়ে আক্বীকা দেয় নি বা দিতে পারে নি। তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতঃ কুরবানীর একই পশুতে আক্বীকাও করে। আমরা এই আমলটি প্রায় দেখতে পাই। এখন প্রশ্ন হল, এই রকম করা কি শরীয়ত স্বীকৃত, এটা কি সহীহ দলীল সম্মত? আমরা এ স্থানে এ সম্পর্কে কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করবো। [ওয়ামা তাউফীকী ইল্লা বিল্লাহ ]
বিষয়টির প্রামাণিকতা: আসলে বিষয়টির সম্পর্কে কোন হাদীস পাওয়া যায় না । এমনকি সাহাবাগণের আমলও পরিলক্ষিত হয় না। তাই বলা যেতে পারে মাস্আলাটি পুরোপুরি ইজতেহাদী মাস্আলা। অর্থাৎ ইসলামের মুজতাহিদ উলামাগণের গবেষণা দ্বারা স্বীকৃত, যা ফিক্হ গ্রন্থ সমূহে বর্ণিত হয়েছে। এই রকম বিষয়ে আমরা কোন গবেষককে (মুজতাহিদকে) দোষারোপ করতে পারি না। কারণ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “ফয়সালাকারী যখন বিধান প্রণয়নে গবেষণা মূলক প্রয়াস করে এবং সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে তখন তার জন্য দুটি সওয়াব নির্ধারিত হয়, আর সিদ্ধান্তে ভুল হলে একটি সওয়াবের অধিকারী হয়’’। [বুখারী মুসলিম] তবে চোখ বন্ধ করে কোন একটির অনুসরণও করা যায় না; কারণ হক্ব কোন একটি মতের সাথে রয়েছে, সবার সাথে না। তাই যেই মতটি কিতাব ও সুন্নতের বেশী কাছাকাছি আমরা সেটিই গ্রহণ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আপত্তি স্বরূপ কেউ বলতে পারে, কোন্ মতটি দলীল-প্রমাণের বেশী নিকটে সেটা তো সেই মুজতাহিদগণই বেশী অবগত ছিলেন? আমি বলবো তাহলে তাদের মতভেদ কেন হল? তাছাড়া যখন আমরা তাদের সকলের গবেষণা এক স্থানে তুলে ধরবো, তখন কোন্ মতটি বেশী দলীল সম্মত আমাদের তৃতীয় পক্ষের নিকট ফুটে উঠবে। ইনশাআল্লাহ।
গবেষক উলামাগণের মতামত এবং দলীলাদিঃ
একটি গরু কিংবা উটের ৭ ভাগের মধ্যে কয়েকটি ভাগ কুরবানীর উদ্দেশ্যে এবং অন্যটি আক্বীকার নিয়তে যবাই করা জায়েয কি জায়েয নয়, এ বিষয়ে উলামাগণ মতভেদ করেছেন।
১- হানাফী, শাফেয়ী এবং হাম্বালী মাযহাবের এক বর্ণনা অনুযায়ী এই রকম করা জায়েয।
এই মতের যুক্তি সমূহঃ
হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে বিষয়টির সম্পর্কে উল্লেখ হয়েছে যে, উভয়ের উদ্দেশ্য ‘কুরবাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য লাভ তাই এইরকম করা জায়েয। তারা এই মতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ যেমন কেউ যদি গরু কিংবা উটের এক ভাগে কুরবানীর নিয়ত করে, অন্য কেউ দ্বিতীয় ভাগে ইহরাম অবস্থায় শিকার করার কাফ্ফারার নিয়ত করে, কেউ অন্য ভাগে নফল কুরবানীর নিয়ত করে, আর কেউ অন্য ভাগে হজ্জে তামাত্তু কিংবা কিরান হজ্জের কুরবানীর নিয়ত করে, তাহলে এটা যেমন জায়েয, তেমন কুরবানীর সাত ভাগের এক ভাগে আক্বীকার নিয়তও জায়েয। শর্ত হচ্ছে, সকল অংশীদারের নিয়ত যেন আল্লাহর নৈকট্য হয়, গোস্ত খাওয়া কিংবা অন্য উদ্দেশ্য না হয়। [ফাতাওয়া হিন্দিয়্যাহ,৫/৩০৪, বাদাইউস্ সানাঈ,৫/৭২]
শাফেয়ী মাযহাবের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থে উল্লেখ হয়েছে,
” و لو ذبح بقرة أو بدنة عن سبعة أولاد أو اشترك فيها جماعة جاز سواء أرادوا كلهم العقيقة أو أراد بعضهم العقيقة و بعضهم اللحم كما سبق في الأضحية “
“আর সে যদি একটি উট কিংবা গাভী সাত সন্তানের পক্ষ্ হতে যবাই করে কিংবা এক গোষ্ঠি তাতে শরীক হয় তো জায়েয। চাই তারা সকলে আক্বীকার ইচ্ছুক হোক কিংবা কিছু লোক আক্বীকার এবং অন্যরা গোস্ত খাওয়ার উদ্দেশ্য রাখুক, যেমন কুরবানীর অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে’’। [আল্ মাজমু, নওয়াভী,৮/৪২৯, নেহাইয়াতুল্ মুহতাজ, রামলী,৮/১৪৬, ফাতাওয়া ফিকহিয়্যাহ কুবরা, হায়ছামী,৪/২৫৬]
এই মতের পর্যালোচনাঃ এই মতের পর্যালোচনা স্বরূপ বলা সঙ্গত হবেঃ
ক- প্রথমে এটা প্রমাণের প্রয়োজন আছে যে, গরূ কিংবা উট দ্বারা আক্বীকা বৈধ কি বৈধ নয়। আর যদি সেটাই প্রমাণিত না হয় তাহলে কুরবানীর উট-গরুর একাংশে আক্বীকা তো পরের প্রশ্ন।
খ- শুধু নৈকট্যের নিয়ত থাকলেই যে গরু-উটের কোনো ভাগে আক্বীকা দেওয়া জায়েয তা যথেষ্ট নয়। কারণ ইবাদতের ক্ষেত্রে যেমন আল্লাহর নৈকট্যের উদ্দেশ্য জরূরী, তেমন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর ‘মুত্বাবাআহ’ অনুসরণ জরূরী, যেটা ইবাদত কবুলের দ্বিতীয় শর্ত। এখানে একাধিক শরীকের মধ্যে নৈকট্যের উদ্দেশ্য থাকলেও নবীর অনুসরণ নেই। অর্থাৎ কুরবানীর পশুতে আক্বীকা দেওয়ার কোন প্রমাণ নেই।
গ- কুরবানীর একাংশে আক্বীকা দেওয়া জায়েয, এই মন্তব্যের পিছনে হানাফী মাযহাবে যে সব উদাহরণ পেশ করা হয়েছে সে সবই হজ্জ ও হজ্জের ভুল-ত্রুটির সাথে সম্পৃক্ত। আর হজ্জের এই সব ক্ষেত্রে শরীক সাব্যস্ত। তাই সে সবের উপর কিয়াস (অনুমান) করে আক্বীকাকে তার সাথে সম্পৃক্ত করা অসঙ্গত।
ঘ- আক্বীকা একটি ইবাদত যার সময়-কাল ও উদ্দেশ্য স্বতন্ত্র। অনুরূপ কুরবানীও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত যার সময়-কাল ও উদ্দেশ্য নির্ধারিত। কিন্তু উভয়কে একত্রীকরণে উভয়ের সময় ও উদ্দেশ্য তথা উভয় ইবাদতকে একীকরণ করা হয়, যা নিঃসন্দেহে ভুল তথা শরীয়তে হস্তক্ষেপ।
হাম্বলী মাযহাবের যেই মতানুযায়ী এটা বৈধ তার বর্ণনাঃ
উট-গরুর একাংশে আক্বীকা হওয়া সম্পর্কে হাম্বালী মাযহাবে দুটি মত রয়েছে। এই রকম করা জায়েয নয়, এটিই তাদের অধিকাংশ উলামাগণের মত, যা সামনে বর্ণিত হবে। কিন্তু বৈধ বলে যেই বর্ণনাটি রয়েছে তাদের যুক্তির সারাংশ হচ্ছেঃ যেমন কোনো ব্যক্তি যদি এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করে, যে সময় দুই রাকাআত সুন্নতে মুআক্কাদার সময় এবং তাহিয়্যাতুল মসজিদেরও সময়। যেমন ফজরের ফরযের পূর্ব সময়। এই সময় সে যদি এক সাথে তাহিয়্যাতুল মসজিদ ও ফজরের দুই রাকাআত সুন্নতে মুআক্কাদার নিয়তে নামায পড়ে, তাহলে যেমন দুই নামায এক সাথে আদায় হয়ে যায়। অনুরূপ এক সাথে জানাবাত (বড় নাপাকী) এবং জুমআর গোসলের নিয়ত করলে, যেমন দুটি আমল আদায় হয়ে যায়, তেমন আক্বীকা ও কুরবানী এক সাথে দিলে উভয় ইবাদত আদায় হয়ে যাবে এবং বৈধ হবে।
পর্যালোচনাঃ
ক- আসলে উপরোক্ত নামায, গোসল এবং এইরূপ অন্য আমল একত্রে উভয়ের নিয়তে একটি সম্পাদন করলে দুটিই আদায় হওয়া এবং কুরবানীর কোন ভাগে আক্বীকা দেওয়া, দুটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। কারণ সেই সব আমলের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, দুটি সম স্তর ও একই রূপ-রেখার আমল একই সময়ে আকষ্মিক ভাবে অর্থাৎ আমলকারীর অনিচ্ছায় একত্রিত হয়ে গেছে। তাই একটি সম্পাদনের মাধ্যমে দুটি আমল সিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য বিষয়ে আমরা আক্বীকাকে তার নিজ সময়ে অর্থাৎ ৭ কিংবা ১৪ কিংবা ২১ তারিখে না করে ইচ্ছাকৃতভাবে কুরবানীর সময়ে দিচ্ছি যখন বাচ্চার বয়স কয়েক বছর হয়ে গেছে বা কম করে হলে আক্বীকার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেছে। তাই তাদের এই সকল যুক্তি বা দলীল আলোচ্য বিষয়ের বাইরে। হ্যাঁ এই মতের দলীলাদি তখন স্বস্থানে হত, যদি কুরবানীর দিনে নবজাতকের বয়স ৭ কিংবা ১৪ কিংবা ২১ হত। তখন প্রশ্ন আসতো যে, এই সময় তাহলে কুরবানী ও আক্বীকার নিয়তে একটি পশু যবাই করলে উভয় বিধান আদায় হবে কি না? অনেকে দুটি বিষয়কে সংমিশ্রণ করে দিয়েছে। তাই বলা যেতে পারে হাম্বলী মাযহাবের এই মতটি আলোচ্য বিষয়ে নয় তাই তা গ্রহণীয় ও নয় ।
তাছাড়া এক নিয়তে দুই ইবাদত সম্পাদন হওয়ার বিষয়টি উলামাদের নিকট সর্বজন স্বীকৃত বিষয় নয়। বরং অনেকে এ বিষয়ে মতভেদ করেছেন।
যত দূর তাহিয়্যাতুল মসজিদ এবং সুন্নতে মুআক্কাদা এক সাথে আদায় হওয়ার বিষয়, তা আসলে সুন্নতে মুআক্কাদা পড়লে তাহিয়্যাতুল মসজিদ হয়েই যায়, যদিও নামায আদায়কারী তার নিয়ত না করে। কারণ তাহিয়্যাতুল মসজিদ মানে মসজিদের সম্মান। আর সেটা যে কোন সুন্নত নামাযের মাধ্যমে আদায় হয়ে যায়।
২- মালেকী এবং হাম্বলী মাযহাবের দ্বিতীয় বর্ণনানুযায়ী একই পশুতে কুরবানী ও আক্বীকা জায়েয নয়।
মালেকী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে উল্লেখ হয়েছেঃ
قال شيخنا أبو بكرالفهري إذا ذبح أضحيته للأضحية والعقيقة لا يجزيه و إن أطعمها وليمة أجزأه والفرق أن المقصود في الأولين إراقة الدم و إراقته لاتجزئ عن إراقتين والمقصود من الوليمة الإطعام وهوغير مناف للإراقة فأمكن الجمع انتهى.
“আমাদের শাইখ আবু বকর ফিহরী বলেনঃ যদি সে তার কুরবানীকে কুরবানী ও আক্বীকার উদ্দেশ্যে যবাই করে, তাহলে সেটা যথেষ্ট হবে না। তবে যদি তা অলীমা স্বরূপ খাওয়ায় তাহলে যথেষ্টে হবে। পার্থক্যের কারণ প্রথম দুইয়ের (কুরবানী ও আক্বীকার) উদ্দেশ্য রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি। তাই একটি রক্ত প্রবাহ দুটি প্রবাহের জন্য যথেষ্ট হবে না। আর অলীমার উদ্দেশ্য খাদ্য খাওয়ানো। আর তা রক্ত প্রবাহের বিরোধী নয় তাই কুরবানীর সাথে তা একত্রীত করা সম্ভব’। [ মাওয়াহিবুল জালীল, হাত্তাব, ৪/৩৯৩]
হাম্বালী মাযহাবে উল্লেখ হয়েছেঃ
والمذهب أنه لا يجزئ فيها شرك في دم و لايجزئ إلا بدنة أو بقرة كاملة
“মাযহাব হল, তাতে (আক্বীকাতে) অংশী জায়েয নয় এবং পূর্ণাঙ্গ একটি উট কিংবা গাভী ব্যতীত তা যথেষ্ট নয়।” [মুবদি, বুরহানুদ্দীন, ৩/২২৫]
এই মতের মন্তব্যঃ
আক্বীকা ও কুরবানী উভয়ে স্বতন্ত্ররূপে কাম্য। তাই কোন একটি উভয়ের জন্য যথেষ্টে হবে না এবং উভয়ের কারণও ভিন্ন ভিন্ন যেমন, কুরবানী হচ্ছে জীবনের মুক্তিপণ আর আক্বীকা হচ্ছে সন্তান লাভে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও সন্তানপণ। তাই একটি অপরটির অন্তর্ভুক্ত হবে না।
রাজেহ বা অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মতঃ
মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের দ্বিতীয় মতটি রাজেহ তথা অধিক গ্রহনযোগ্য মত। কারণ সমুহ নিম্মে দেখা যেতে পারে:
১- যেহেতু বিষয়টির সম্পর্ক ইবাদতের সাথে আর ইবাদতের মূলণীতি হচ্ছে ‘তাওক্বীফিয়্যাহ’। অর্থাৎ কোনো ইবাদত ততক্ষণে বৈধ নয় যতক্ষণে প্রমাণ না পাওয়া যায়। তাই এই রকম বিষয়ের বৈধতা সম্পর্কে শরীয়তের দলীল-প্রমাণ জরূরী। কিন্তু বৈধতার পক্ষ্য না তো কুরআনে কিছু বলা হয়েছে, আর না কোনো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এমনকি সাহাবীগণের কোন আমলও পাওয়া যায় না। তাই এই রকম ক্ষেত্রে কুরবানীর কোনো ভাগে আক্বীকা দেওয়া দলীল বর্হিভূত।
২- আক্বীকার অধ্যায়ে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তা অবলকন করলে দেখা যায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম) ছাগল-দুম্বা ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা আক্বীকা দেন নি। তাই গরু দ্বারা আক্বীকা দেয়ার সম্পর্কে ইসলামী পন্ডিতগণ মতভেদ করেছেন। আর যেই বিষয়ে মুজতাহিদগণের মতভেদ বিদ্যমান, সেই মাস্আলার উপর কিয়াস (অনুমান) করে কোনো বিষয়ের বৈধ বা অবৈধতার বিধান দেওয়া মুজতাহিদগণের দৃষ্টিতে নিষেধ। উসূলে ফিকহের পরিভাষায় যার উপর কোনো মাস্ আলাকে কিয়াস করা হয়, তাকে বলে ‘আস্ ল’। আর যে বিষয়গুলিকে কিয়াস করা হয়, তাকে বলে ‘ফারউ’। আস্ লের প্রথম শর্তই হলঃ
أن يكون الأصل ثابتا بنص من الكتاب أو السنة أو ا لإجماع
অর্থাৎ, আসল যেন কিতাব কিংবা সুন্নত কিংবা ইজমার দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয়। [শারহু মাখ্তাসারির রাউদা, তূফী,৩/২৯২]
এখন গরু-উট দ্বারা আক্বীকা দেওয়ার মধ্যেই যদি মতভেদ থাকে, তাহলে কুরবানীর গরু বা উটের একাংশে আক্বীকা দেওয়া কি ভাবে বৈধ হতে পারে ?
৩- বৈধতার পক্ষে হানাফী মাযহাবের এই যুক্তি যে, এ সবের উদ্দেশ্য যেহেতু ‘কুরবাহ’ বা নৈকট্য, তাই জায়েয। কিন্তু বিড়ম্বনা হল, তাদের নিকট আক্বীকা বিদআত। ইমাম শাফেয়ী (রহ) বলেনঃ ‘দুই ব্যক্তি এ বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করেছে। একজন আক্বীকাকে বিদআত বলেছে আর অপরজন ওয়াজিব বলেছে’। তিনি বিদআত বলেছে বলে ইমাম আবু হানীফার (রহ) এর দিকে ইঙ্গীত করেন। [ মাজমূ, নাওয়ভী, ৩/৩৫৬, ফাতহুল বারী, ৯/৭২৮]
হানাফী মাযহাবের মুতাআখখেরীন বা পরবর্তী যুগের ফুকাহাগণ কেউ আক্বীকাকে মাকরূহ আর কেউ মুবাহ বলেছেন। [বাদাইয়ূস্ সানাই, কাসানী ৫/১২৭] কিন্তু তাদের নিকট কুরবানী ওয়াজিব বা জরূরী। আক্বীকা বিদআত কিংবা মাকরুহ কিংবা মুবাহ হলে তো ‘কুরবাহ’ প্রমাণিত হয় না। কারণ বিদআত হারাম । মুবাহ অর্থ, যা করা বা না করাতে সওয়াব বা গুনাহ নেই। আর মাকরূহ তাহরীমী হলে, তা নাজায়েয আর যদি তা তানযীহী হয় তো তা করা অপছন্দনীয়, না করা উত্তম করলে গুনাহ হয় না। তাই তাদের মাযহাব অনুযায়ীও তো আক্বীকা ‘কুরবাহ’ প্রমাণিত হয় না। আর কুরবাহ প্রমাণিত না হলে ওয়াজিবের মত একটি ইবাদতে অকুরবার সংমিশ্রণ মাযহাব অনুযায়ী ও অবৈধ।
৪- আক্বীকার সময়সীমা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম০ বলেনঃ
كُلُّ غُلامٌ مُرْتَهَنٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ الْيَوْمَ السَّابِعَ وَ يُمَاطُ عَنْهُ الأَذَى.
“ প্রত্যেক বাচ্চা তার আক্বীকারর বিনিময়ে বন্ধক থাকে, সপ্তম দিনে তার পক্ষ্য হতে জবাই করা হবে এবং তার মাথা মুণ্ডণ করা হবে’’। [সহীহ ইবনু মাজাহ, অধ্যায়, যাবাইহ, নং ৩১৬৫/আবু দাউদ/তিরমিযী/নাসাঈ]
এই তারিখে সম্ভব না হলে ১৪ কিংবা ২১ তারিখে করতে বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
” تذبح لسبع أو لأربع عشرة أو لإحدى و عشرين” [ صحيح الجامع الصغير، رقم 4011 ]
“সপ্তম দিনে যবাই করা হবে কিংবা ১৪তম দিনে কিংবা ২১তম দিনে”। [ সহীহ জামে স্বাগীর, নং ৪০১১]
এখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক আক্বীকার নির্ধারিত সময়ে আক্বীকা না করে কুরবানীর সময় সন্তানের আক্বীকা দেওয়া বর্ণিত হাদীস সমূহের বিপরীত। আমাদের জানা উচিৎ যে, কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে বিধানদাতা (শারে) যখন সময় নির্ধারণ করে দেন, তখন তার অবশ্যই কোন উদ্দেশ্য থাকে নচেৎ সময় নির্ধারণ করা হত না। যেমন কুরবানীর সময়-কাল নির্ধারিত। এখানে যেমন কুরবাণীটি উদ্দেশ্য তেমন নির্ধারিত সময়ও উদ্দেশ্য। তাই কোন এক সাহাবী নামাযের পূর্বে কুরবানী করলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লাম) তাকে নামাযের পর পুনরায় কুরবানী করতে বলেন।
মোট কথা আক্বীকাকে নিজ সময়ে না করা হলে যেমন সুন্নত পালন হয় না, তেমন শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সময় অর্থহীন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে অসময়ে কুরবানীতে আক্বীকা দেওয়ার সুযোগ খোঁজা হয়। বেইনসাফী হবে না, যদি আমি বলি যে, এই অপ্রমাণিত ফাতওয়ার কারণে হানাফী সমাজে সন্তানের আক্বীকার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের উদাসীন দেখা যায়। কারণ তারা যথা সময়ে আক্বীকা না করে কুরবানীতে আক্বীকা দিতে চায়।
ফল কথা, কুরবানীর একাংশে আক্বীকা দেওয়া শরীয়তের দলীল দ্বারা স্বীকৃত নয়, তাই এই আমল করা অনুচিৎ। আর যারা কিছু বিষয়ের উপর কিয়াস (অনুমান) করে বৈধতার কথা বলেছেন, তাদের কিয়াসও ফাসেদ ত্রুটিপূর্ণ। ওয়াল্লাহু তাআলা আ’লাম।
আপনাদের দুআর আশাবাদী, আব্দুর রাকীব (মাদানী) অনার্স, ফিকহ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়। দাঈ, ইসলামিক দাওয়াত সেন্টার, খাফজী, (সউদী আরব)
এই লেখটিও পড়ুন: ইসলামে আকীকা করার বিধানঃ কোরবানীর গরুর সাথে ভাগে আকীকা দেয়া কি বৈধ?
Sarwar Hossain
18 Oct 2012MashaALLAH Very nice logic.
Anonymous
21 Oct 2012Dhonnobad
Anonymous
18 Oct 2012zazak Allah kyer.
আতিক ইসরাক
19 Oct 2012আলহামদুলিল্লাহ!
Anonymous
19 Oct 2012zazakallah khairan. allah apnaka aro bashi topik dan kourn.
Anonymous
19 Oct 2012jajakallaho khairan
abdul jalil
21 Oct 2012জাযাকাল্লাহ খাইর
Anonymous
21 Oct 2012Keep it up. May Allah accept your all good deeds and forgive your sins.
Abdullah
22 Oct 2012Alhamdulillah,
This article is very important. So, please re-post it in PDF format so that I can download and save in my PC. Please convert it in PDF very soon.
Zajakallahu Khairan
Muminur Rahman
Dhaka
Anonymous
25 Oct 2012jajakallah khairan
umsalma
31 Oct 2012zazak Allah kyer.
sohan
3 Nov 2012korbanir goror vori o ki vag kor te hobe?
Anonymous
16 Oct 2013সুন্দর পোষ্ট
md. Lutfur rahman
21 Jul 2014hanafi majhabe akika ‘bidat’ etato jantam na!amader desher hanafi alemra ki eta janen?
abdul kaiyum
5 Sep 2014gan thaklay bujben a likha thakay ;ibaadot ki r moyahmilat moyahsara ki?
jajakumullah khairan sommanito sheikh abdur raquib al bukhari al madani
Anonymous
24 Jun 2015বিষয়টি ব্যাপকভাবে সমাজে প্রচারিত হওয়া দরকার