জাল ও য’ঈফ হাদীসঃ ১৬-১৯
১৬) “আমার উম্মতের মধ্যে মতভেদ রহমত স্বরূপ।”
–হাদীসটির কোন ভিত্তি নেই।
মুহাদ্দিসগণ হাদীসটির সনদ বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) জামেউস সাগীর গ্রন্থে বলেছেনঃ “সম্ভবত কোন হুফ্ফায-এর গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু তা আমাদের নিকট পৌঁছেনি।”
আমার (আলবানী) নিকট এটি অসম্ভবমূলক কথা, কারণ এ কথা এটাই সাব্যস্ত করে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কিছু হাদীস উম্মতের মধ্য হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোন মুসলিমের এরূপ বিশ্বাস রাখা যুক্তিসংগত নয়।
মানাবী (রহঃ) সুবকীর উদ্ধৃতিতে বলেছেনঃ “হাদীসটি মুহাদ্দিসদের নিকট পরিচিত নয়। এটির কোন সহীহ, দুর্বল এমনকি জাল সনদ সম্পর্কেও অবহিত হতে পারি নি। ”
শাইখ জাকারিয়া আল- আনসারী ‘তাফসীর বায়যাবী’ গ্রন্থের টিকায় (কাফ ২/৯২) মানাবীর (রহঃ) কথাটি সমর্থন করেছেন।
এছাড়া হাদীসটির অর্থও বিচক্ষণ আলেমদের নিকট অপছন্দনীয়। ইমাম ইবনু হাযম (রহঃ) “আল-ইহকাম ফি উসূলিল আহকাম ” গ্রন্থে (৫/৬৪) এটি কোন হাদীস নয় এ ইশারা দেয়ার পর বলেনঃ “এটি অত্যন্ত নিকৃষ্ট কথা। কারণ যদি মতভেদ রহমত স্বরূপ হত, তাহলে মতৈক্য অপছন্দনীয় হত। এটি এমন একটি কথা যা কোন মুসলিম ব্যক্তি বলেন না। ”
তিনি অন্য এক স্থানে বলেনঃ “এটি বাতিল, মিথ্যারোপ। ”
এ বানোয়াট হাদীসের কুপ্রভাবে বহু মুসলমান চার মাযহাবের কঠিন মতভেদগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। কখনো কিতাবুল্লাহ ও সহীহ হাদীসের দিকে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করেন না। অথচ সে দিকে তাদের ইমামগণ প্রত্যাবর্তন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বরং তাদের নিকট এ চার মাযহাব যেন একাধিক শরীয়তের ন্যায়।
আল্লাহ বলেনঃ “যদি (এ কুর’আন) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট হতে আসত, তাহলে তারা তাতে বহু মতভেদ পেত।” (সূরা নিসাঃ ৮২)
আয়াতটি স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে যে, মতভেদ আল্লাহ তায়ালার নিকট হতে নয়। অতএব কীভাবে এ মতভেদকে অনুসরণীয় শরীয়ত বানিয়ে নেয়া সঠিক হয় ? আর কীভাবেই তা নাযিলকৃত রহমত হতে পারে ?
মোটকথা শরীয়তের মধ্যে মতভেদ নিন্দনীয়। ওয়াজিব হচ্ছে যতদূর সম্ভব তা থেকে মুক্ত হওয়া। কারণ এটি হচ্ছে উম্মতের দুর্বলতার কারণসমূহের একটি। যেমনিভাবে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ “এবং তোমরা আপোসে বিবাদ করো না , কারণ তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে আর তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হয়ে যাবে। ( আনফালঃ ৪৬ )
অতএব মতভেদে সন্তুষ্ট থাকা এবং রহমত হিসেবে তার নামকরণ করা সম্পূর্ণ কুর’আন বিরোধী কথা , যার অর্থ খুবই স্পষ্ট। অপরপক্ষে মতভেদের সমর্থনে সনদবিহীন এ জাল হাদীস ছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই।
এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে , সাহাবীগণ মতভেদ করেছেন , অথচ তারা লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম। তাদেরকে কি উল্লেখিত এ নিন্দা সম্পৃক্ত করে না ?
ইবনু হাযম (রহঃ) বলেনঃ কক্ষণও নয়। তাদেরকে এ নিন্দা সম্পৃক্ত করবে না। কারণ তাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর পথ এবং হকের পক্ষকে গ্রহণ করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। তাদের মধ্য হতে যে ব্যক্তি ভুল করেছেন তিনি তাতেও সওয়াবের অধিকারী এবং একটি সওয়াব পাবেন। সুন্দর নিয়্যাত এবং উত্তম ইচ্ছা থাকার কারণে। তাদের উপর হতে তাদের ভুলের গুণাহ উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। কারণ তারা ইচ্ছাকৃতভাবে তা করেননি; আর তারা সত্যকে জানার গবেষণার ক্ষেত্রে অলসতাও করেন নি। ফলে তাদের মধ্যে যিনি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন, তিনি দু’টি সওয়াবের অধিকারী। এমন ধারা প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য কিয়ামত দিবস পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে ধর্মীয় ঐ সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে যেগুলোর সমাধান লুকায়িত, যা আমাদের নিকট এখন পৌঁছায়নি।
উল্লেখিত নিন্দা ও ভীতি ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য যে কুর’আনকে এবং নবীর হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করে, তার নিকট স্পষ্টভাবে দলীল প্রতীয়মান হওয়ার পরেও। বরং কুর’আন ও হাদীসকে পরিত্যাগ করার মানসে অন্য ব্যক্তির সাথে সে সম্পর্ক স্থাপন করেছে ইচ্ছাকৃতভাবে মতভেদের অন্ধ অনুসরণ করে, গোঁড়ামী ও অজ্ঞতার দিকে আহবানকারী হিসেবে। সে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তার দাবীর সমর্থনে কুর’আন ও হাদীসের যে কথাটি মিলে সেটি গ্রহণ করে আর যেটি তার বিপরীতে যায় সেটি পরিত্যাগ করে। এরাই হচ্ছে নিন্দনীয় মতভেদকারী।
১৭) “যে ব্যক্তি কবরস্থানে প্রবেশ করে সূরা ইয়াসিন পাঠ করবে সেদিন তাদের থেকে শাস্তিকে লাঘব করা হবে এবং সে (প্রবেশকারী) ব্যক্তির জন্য গোরস্থানের মৃত ব্যক্তির সংখ্যায় সাওয়াব (লিপিবদ্ধ করা) হবে।”
১৯) “নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে পুনরায় ঊযু করতে হবে।”
—হাদীসটি জাল (বানোয়াট)
সূত্রঃ হাদীসটি ইবনু আদী ‘আল-কামেল’ গ্রন্থে (কাফ ২/৪২৭) ইয়াগনাম ইবনু সালেম হতে, তিনি আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
অতঃপর ইবনু আদী বলেছেনঃ ইয়াগনাম আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মুনকার হাদীস বর্ণনাকারী আর তার অধিকাংশ হাদীস নিরাপদ নয়।
ইবনু হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর উদ্ধৃতিতে হাদীস জাল করতেন।
ইবনু ইউনুস রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন, মিথ্যা বর্ণনা করেছেন।
আবদুল হক ইশবীলী রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-আহকাম’ গ্রন্থে (নং-২৪৪) বলেনঃ ইয়াগনাম মুনকারুল হাদীস, হাদীসের ক্ষেত্রে তিনি দুর্বল।
(আল ইসলাম বাংলা ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম থেকে সংকলিত)