সুখী দাম্পত্য জীবন গঠনে মা-বোনদের প্রতি কতিপয় মূল্যবান উপদেশ
বিষয়টি ডাউন লোড করুন (পিডিএফ-১৬৮কেবি)
আসসলামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
সুখী দাম্পত্য জীবন গঠনে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ভূমিকা থাকে। আর এটা সব সময় এক রকম থাকে না। কখনো কমে কখনো বাড়ে। সেটা আল্লাহর রহমতের পর নির্ভর করে তাদের উভয়ের চেষ্টার উপর। কিন্তু স্ত্রী এ ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আরবী সাহিত্য জগতের সাহিত্য ও বাগ্মিতায় একজন প্রসিদ্ধ নারী উমামা বিনতে হারেস (আউফ ইবনে মুহাল্লাম আশ শায়বানীর স্ত্রী) তার মেয়েকে বিয়ের পর অতি গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় উপদেশ দিয়ে ছিলেন যা আরবদের মাঝে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে সে উপদেশগুলোর অনুবাদ তুলে ধরা হল। সেই সাথে আধুনিক যুগের একজন প্রসিদ্ধ দাঈ এবং আলেম স্বামীর ভালবাসা অর্জনের জন্য স্ত্রীর প্রতি বেশ কিছু মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন সেগুলোও উপস্থাপন করা হল। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যেন সব সময় কল্যাণের উপর অটুট রাখেন। আমীন।
এক আরব মা তার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর উপদেশ দিচ্ছেন:
উমামা বিনতে হারেছ নিজ কন্যার বিবাহের সময় তাকে এমন কিছু নসীহত করেন যা শুধু মেয়ের জন্যই নয়; বরং পরবর্তী সমস্ত নারীর জন্য মাইল ফলক হিসেবে অবশিষ্ট থাকবে।
তিনি মেয়েকে লক্ষ্য করে বলেন, ওহে আমার কলিজার টুকরা মেয়ে! আজ তুমি নিজের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বান্ধবী ও প্রতিবেশী থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে এমন এক অপরিচিত পরিবেশে এমন এক অপরিচিত ব্যক্তির নিকট গমণ করছো যেখানেই রয়েছে তোমার আসল ঠিকানা সেই ব্যক্তিই তোমার প্রকৃত বন্ধু সাথী ও কল্যাণকামী। তুমি ওখানের আচার-আচরণ ও পরিবেশ সম্পর্কে মোটেও অবগত নও। তুমি যদি স্বামীর দাসী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পার, তবে দেখবে সেও তোমার দাসে পরিণত হয়েছে।
এই মূহুর্তে আমি তোমাকে কতিপয় নসীহত করছি। আল্লাহ চাহে তো এগুলো তোমার জীবনের সাফল্য ও সুখি দাম্পত্য জীবনের জন্য পাথেয় হবে।
১) স্বামীর প্রতি বিনীত থাকবে এবং অল্পতেই তার উপর সন্তুষ্ট হবে।
২) ভালভাবে তার কথা শুনবে ও মানবে।
৩) -৪) তার চোখ ও নাকের পসন্দের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। তোমাকে যেন কখনো খারাপ দৃশ্যে সে না দেখে এবং তোমার নিকট থেকে কখনো যেন সর্বোত্তম সুগন্ধি ছাড়া অন্য কিছু না পায়।
৫)-৬) তার খাওয়া দাওয়া ও নিদ্রার বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখবে। কেননা ক্ষুধা ও অনিদ্রা মানুষকে বদমেজাজী ও ক্রোধাম্বিত করে তোলে।
৭) তার ধন-সম্পদের রক্ষণা-বেক্ষণ করবে। হিসাবের সাথে পরিমাণমত তার সম্পদ খরচ করবে।
৮) তার পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীর দেখাশোনা করবে। উত্তমভাবে মনযোগসহকারে তার সন্তান-সন্তুানতিকে লালন-পালন করবে।
৯) তার কোন গোপন বিষয় ফাঁস করবে না ও তার নাফরমানী করবে না। কেননা তার গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলে একদিন সে তোমাকে ধোঁকা দিবে। অবাধ্য হলে তার বুকে আগুন জ্বালাবে তাকে ক্রোধাম্বিত করবে।
১০) তুমি কাঙ্খিত লক্ষ্যে কখনই পৌঁছতে পারবে না যে পর্যন্ত তার সন্তুষ্টিকে নিজের সন্তুষ্টির উপর সন্তান না দিবে, তার পছন্দ-অপছন্দকে নিজের পছন্দ-অপছন্দের উপর সন্তান না দিবে। (আ’লামুন্নেসা ১/৭৪, ত্বাবায়েউন্নেসা পৃঃ ২৮)
স্বামীর প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধির জন্য স্ত্রীকে কতিপয় উপদেশঃ
শায়খ ইবনু জুবাইলান স্বামীর ভালবাসা ও প্রীতি অর্জন করার জন্য নারীদেরকে উদ্দেশ্যে করে কিছু নসীহত করেছেন। তা নিম্নরূপঃ
১) বিভিন্ন উপলক্ষে স্বামীর হাতে কপালে চুম্বন করা।
২) স্বামী বাইরে থেকে এলে সাথে সাথে স্বাগতম জানানোর জন্য দরজায় এগিয়ে আসা। তার হাতে কোন বস’ থাকলে তা নিজের হাতে নেয়ার চেষ্টা করা।
৩) সময় ও মেজাজ বুঝে স্বামীর সামনে প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত বাক্যালাপ করা। তার সামনে তার প্রশংসা করা। সম্মান ও শ্রদ্ধা মূলক আচরণ করা।
৪) স্বামীর পোশাক-আশাকের পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা। (পরিচ্ছন্ন পুরুষ মানেই তার স্ত্রী পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন)। রান্নার ক্ষেত্রে স্বামী যা পছন্দ করেন তা নিজ হাতে প্রস্তুত করতে সচেষ্ট থাকা।
৫) সর্বদা স্বামীর সামনে হাসি মুখে থাকা।
৬) স্বামীর জন্য নিজেকে সুসজ্জিত রাখা। শরীরে দুর্গন্ধ থাকলে বা রান্না ঘরের পোষাকে তার সম্মুখে না যাওয়া। মাসিক ঋতুর সময়ও সুসজ্জিত অবস্থায় থাকা।
৭) স্বামীর সামনে কখনই নিজের কন্ঠকে উঁচু না করা। নারীর সৌন্দর্য তার নম্র কন্ঠে।
৮) সন্তানদের সামনে স্বামীর প্রশংসা ও গুণগান করা।
৯) নিজের এবং স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সামনে আল্লাহর কৃতজ্ঞতার সাথে সাথে স্বামীর প্রশংসা করা ও তার শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। কখনই তার বিরুদ্ধে তাদের নিকট অভিযোগ করবে না।
১০) সুযোগ বুঝে স্বামীকে নিজ হাতে লোকমা তুলে খাওয়ানো।
১১) কখনো স্বামীর আভ্যন-রীন গোপন বিষয় অনুসন্ধান না করা। কেননা কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, ((ولا تجسسوا)) “তোমরা কারো গোপন বিষয় অনুসন্ধান কর না। (সূরা হুজুরাত -১৩) নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা কারো প্রতি কুধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। (বুখারী, অধ্যায়ঃ বিবাহ, হা/৪৭৪৭।)
১২) স্বামী কখনো রাগম্বিত হলে চুপ থাকার চেষ্টা করা। সম্ভব হলে তার রাগ থামানোর চেষ্টা করা। যদি সে নাহক রেগে থাকে তবে অন্য সময় তার মেজাজ বুঝে সমঝোতার ব্যবসন্তা করা।
১৩) স্বামীর মাতাকে নিজের পক্ষ থেকে (সাধ্যানুযায়ী) কিছু হাদিয়া-উপহার প্রদান করা।
১৪) সম্পদশালী হয়ে থাকলে স্বামীর অভাব অনটনের সময় তাকে সহযোগিতা করা। উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! (আমার স্বামী) আবু সালামার সন্তানদের জন্য যদি আমি অর্থ ব্যয় করি তবে কি তাতে আমি প্রতিদান পাব। ওদেরকে তো এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। ওরা তো আমারও সন্তান। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি যে পরিমাণ তাদের জন্য সম্পদ খরচ করবে, তোমাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
১৫) স্বামীর নির্দেশ পালন, তার এবং তার সংসারের খেদমত প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রতিদানের আশা করা।
পরিশেষে দুয়া করি, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদেরকে পরিবারগুলোকে যে সুখ-সম্ভারে ভরে দেন এবং সেখান থেকে সকল অশান্তি দূর করে দেন। আমীন।
উল্লেখ্য যে, উক্ত বিষয়টি জান্নাতী রমনী বই থেকে নেয়া হয়েছে।
mohammed rais uddin
22 Dec 2011আসসালামু আলাইকুম, সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ । এসমসত লেখা সমাজ জীবনে সুখ বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি । এ ধরনের লেখা আরো বেশি করে লিখার জন্য অনুরুধ রাখলাম ।
আব্দুল্লাহিল হাদী
23 Dec 2011প্রতিটি দাম্পত্য সুখী হোক মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে এই প্রত্যাশা করছি। মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
মনির হুসসাইন
25 Dec 2011আসসালামু আলাইকুম, সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ । এসমসত লেখা সমাজ জীবনে সুখ বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি । এ ধরনের লেখা আরো বেশি করে লিখার জন্য অনুরুধ রাখলাম
Anonymous
22 Dec 2011খুব ভালো লাগলো।তবে প্রতিটি বিষয়ের পূর্ণ তথ্য-সূত্র উল্লেখ থাকাটা একান্তভাবে কামনা করছি।আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন! আ-মীন
আব্দুল্লাহিল হাদী
29 Dec 2011আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। তথ্যসূত্র উল্লেখ করে দিলাম। জাযাকাল্লাহ খাইরান।
m a alim
23 Dec 2011jajakallaho khairan apner ottanto gorottoporn post deyar jonno.
আব্দুল্লাহিল হাদী
29 Dec 2011আপনার মন্তব্যের জন্য আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। আমীন।
[email protected]
23 Dec 2011jajakallah kayer
আব্দুল্লাহিল হাদী
29 Dec 2011বারাকাল্লাহু ফীক।
Anonymous
1 Jan 2012zazak Allah Khair,,,Hadi vai
মুকিত
4 Jan 2012সন্মানিত সাইখ,
আমি এই পোষ্টখানা একটি ব্লগে পোষ্ট করেছি, যদিও আপনার পূর্বানুমতি নেওয়া হয় নাই, তাই মাফ চাচ্ছি. আরও ভালো ভালো পোষ্ট চাই, যাতে আমরা নিজেরা সুদ্ধহতে পারি এবং তার পেরচার করতে পারি.
জাজাক আল্লাহ খাইরান
আব্দুল্লাহিল হাদী
17 Jan 2012এই সাইটের কোন কিছু অন্যত্র প্রকাশ করার জন্য কোন অনুমতি নেয়ার দরকার নাই। তবে মূল লেখকের নাম ও সূত্র উল্লেখ করবেন। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
MM.Morshed.
30 Sep 2013…..খুব ভালো লাগলো।তবে প্রতিটি বিষয়ের পূর্ণ তথ্য-সূত্র উল্লেখ থাকাটা একান্তভাবে কামনা করছি।আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন! আ-মীন…. Thanks allot to the writer.
Pingback: দাম্পত্য জীবনে ব্যর্থ যে নারী | কুরআন-সুন্নাহ আমার জান্নাতের পথ