সম্মানিত ভাই, প্রিয় বাংলাদেশে আল্লাহ তায়ালা অনেক নিয়ামত দিয়েছেন। বর্তমানে মৌসুমী শাক-সবজীতে ভরপূর বাংলাদেশের নিভৃত পল্লী, গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগর সর্বত্র। এসকল শাক-সবজীর মধ্য থেকে বেগুন অতি সুপরিচিত এবং সহজ লভ্য একটি জিনিস। বাঙ্গালী বেগুনের ভর্তা থেকে শুরু করে কত ভাবে যে বেগুনের ব্যবাহার করে থাকে তা বলা মুশকিল। কিন্তু অনেকেই জনি না এই বেগুনের গুণাগুণ সম্পর্কে। যার কারণে, অনেকে বলেন, যার নেই কোন গুণ তার নাম বেগুন। কিন্তু গবেষকগণ প্রমাণ করেছেন, এটি শুধু একটি তরকারীই নয় বরং এতে রয়েছে রোগমুক্তিসহ বহু উপকারিতা। তবে আসুন, চট-জলদি এই বেগুনের গুণাগুণগুলো জেনে নেই।
বেগুন বাজারে দুপ্রকার দু রঙের পাওয়া যায়। সাদা ও বেগুনী। বেগুনি বা কালো বেগুনের গুণ অনেক বেশী। বেগুন যত কচি হবে তাতে গুণ তত বেশী থাকবে। এ রকম কচি বেগুন খেলে শরীরের বল বৃদ্ধি পাবে। অত্যধিক বীজ যুক্ত বেগুন বিষের মত ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়।
সংস্কৃত শ্লোকেই আছে, ‘বৃন্তাকং বহু বীজাণাং বিষম্ বৃন্তাক’ অর্থাৎ বেগুন বেশী বীজ যুক্ত হলে বিষ।
বৈজ্ঞানিকদের মতেঃ বেগুনে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন এবং কিছু কিছু লবণ কম বা বেশীমাত্রায় আছে। এতে ভিটামিন এ, বি, সি, ও লোহাও আছে। খাদ্যগুণ ও ভিটামিন বেশী থাকায় এবং দামেও সস্তা হওয়ায় বেগুন নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, নাম বেগুন হলে কি হবে? তাতে কিন্তু অনেক গুণ আছে। বেগুনের এই সব গুণ দেখে এবং বেগুনের তরকারি ও বেগুন পোড়া খেয়ে মুগ্ধ হয়ে একজন বৈদ্য কবি তার ‘ক্ষেম-কুতূহল’ নামক গ্রন্থে বেগুনকে ‘শাক নায়ক’ অর্থাৎ তরকারির মধ্যে প্রধান ভূমিকা, এই উপাধি দিয়েছেন।
বেগুন গুণের আরও অনেক ব্যাখ্যা আছে। সংস্কৃতে আছে, বেগুনের আরও নাম আছে। সংস্কৃতে গোল বেগুনকে বলা হয় বৃত্তফলা। যে বেগুনে শাস বেশী থাকে অর্থাৎ পুরুষ্টু বেগুনকে বলা হয় মাংসফলা। বেগুন অনেক দিন ধরে গাছে থাকে বলে বলা হয় সদাফলা। রাত রোগের পক্ষে উপকারী বলে বেগুনের আর একটি নাম বাতিঙ্গা। বেগুন অনিদ্রা রোগ দূর করে এবং বেগুন খেলে ভালো ঘুম হয় বলে এর আর একটি নাম হল নিদ্রালু।
ভাব প্রকাশের মতঃ তার মতে, বেগুন স্বাদু, তীক্ষ, উষ্ণ, কটুবিপাক, অপত্তিকর, জ্বর, বাত ও কফনাশক, অগ্নিবর্ধক, শুক্রজনক ও লঘুপাক। বার মাস যে বেগুন পাওয়া যায় তা বায়ু ও কফ নাম করলেও রক্তপিত্তকর। পুরনো গাছের ও বেশী বীজয্ক্তু বেগুন চুলকানি ও চর্মরোগ হয়। সেজন্যে যাদের চুলকানি ও পাঁচড়া আছে তাদের বিচিওয়ালা বেগুন একেবারেই খাওয়া উচিত নয়।
বৈদ্যরাজ চরকঃ তিনি বলেছেন, বেগুনের রসে মধু মিশিয়ে খেলে কফজনিত রোগ দূর হয়।
বিখ্যাত বৈদ্য চক্রদত্ত বলেছেন, বেগুন জ্বরঘ্ন সেজন্যে কচি ও শাসালো বেগুন খেলে জ্বর সারে।
বৈদ্য বঙ্গসেন বলেছেন, আগের দিন সন্ধ্যাবেলা বেগুন ভালোভাবে সিদ্ধ করে পরের দিন তার শাঁস মধু দিয়ে মেখে খেলে অনিদ্রা দূর হয়। বেগুন একেবারে পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই বা ভস্ম গায়ে মাখলে চুলকানি ও চর্মরোগ সারে।
সুস্থ্য থাকতে বেগুন। ১০টি গুণের সমাহার:
১) কচি বেগুন পুড়িয়ে রোজ সকালে খালি পেটে একটু গুড় মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়ার দরুন লিভার বেড়ে যাওয়া কমে যায়।
২) লিভারের দোষের জন্যে যদি চেহারায় হলদেটে ভাব আসে সেটাও ক্রমশ কমে যায়।
৩) যাদের ঘুম ভালো হয় না তারা যদি একটু বেগুন পুড়িয়ে মধু মিশিয়ে সন্ধ্যাবেলা চেটে খান তাহলে তাদের রাত্রে ভালো ঘুম হবে।
৪) বেগুনের তরাকারি, বেগুন পোড়া, বেগুনের স্যুপে, রোজ যদি একটু হিং ও রসুন মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে রায়ুর প্রকোপ কমে।
যদি কারো পেটে বায়ুগোলকের সৃষ্টি হয়ে থাকে সেটাও কমে যায় বা সেরে যায়।
৫) মহিলাদের ঋতু ঠিক মতো না হলে বা কোন কারণে বন্ধ হয়ে গেলে তারা যদি শীতকালে নিয়ম করে বেগুনের তরকারি বাজরার রুটি এবং গুড় খান তাহলে উপকার পাবেন। অবশ্য যাদের শরীরে গরমের ধাত বেশী তাদের পক্ষে এটা না খাওয়াই ভালো।
৬) নিয়মিত বেগুন খেলে মূত্রকৃচ্ছ্রতা সারে।
৭) প্রস্রাব পরিস্কার হওয়ায় প্রারম্ভিকা অবস্থার কিডনির ছোট পাথরও গলে গিয়ে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়।
৮) মুরগীর ডিমের সাইজের ছোট গোল সাদা বেগুন অশ্বরোগের পক্ষে উপকারী ভূমিকা রাখে।
৯) বেগুনের পুলটিস বাঁধলে ফোঁড়া তারাতাড়ি পেকে যায়।
১০) বেগুনের রস খেলে ধুতুরোর বিষ নেমে যায়।
সূত্র: রোগমুক্তি ও স্বাস্থ্য রক্ষায় শাক-সবজি, ফল-মূল ও লতাপাতার গুনাগুন। লেখক, ডাঃ এম, এ কাদের ও হাকিম হাবিবুর রহমান।
বেগুন সম্পর্কে একটি বানোয়াট হাদীস:
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী (রাহঃ) তাঁর সুপ্রসিদ্ধ “হুজ্জাতুল্লাহির বালেগা” নামক কিতাবে লিখেছেন। রাবেন্দী নামক একজন ইহুদী বেগুন সম্পর্কে একটি হাদীস রচনা করে মুসলমান সমাজে প্রচার করে দিয়েছে, তা হলঃ আল বাযিনজানু শিফাউম মিন কুল্লি দাইয়ীন’ অর্থাৎ বেগুন হল সমস্ত রোগের ঔষধ।
বন্ধুগণ! ইহুদী সম্প্রায় এরকম বহু হাদীস রচনা করে ও নিজেদের থেকে বানিয়ে মুসলমানদের মাঝে প্রচার করেছে। দুঃখ হলেও সত্য যে, মুসলমানগণ ইহাকেও হাদীস হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। এ ধরণের বহু হাদীস নামে আমাদের সমাজে চালু আছে। যা আদৌ হাদীস নয়। অথচ মুসলিম সমাজে না জানার কারণে তারা তাদের খাঁটি ও বিশুদ্ধ আমল নষ্ট করে দিচ্ছে এ গুলো বিশ্বাস ও পালনের মাধ্যমে। সহীহ হাদীসের কথা বললে ইত্যাদি ভাষায় বকাবাজি করে।
তাই আসুন আমরা আল কুরআন ও সহীহ হাদীস পড়ে নিজেদের সুন্দর জীবন গড়ি। পরাকালে মুক্তির পথ উন্মোচন করি। আল্লাহ আমাদেরকে সকল সম্পদায়ের সার্বিক কুচক্র থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
লেখক: ব্লগার জাহিদুল ইসলাম।
মনির হুসসাইন
15 Dec 2011হাদি ভাই ভালো
m a alim
16 Dec 2011jajakallaho khairan.pore noton kiso jante perlam.asha kori aro noton noton kiso amader ke janar sojog diben.
shihabuddin
17 Dec 2011জাযাকাল্লাহু খাইরান।
mezan
17 Dec 2011ostad salam niben
Khob balo lahlo bagon somporkito lekha pora
Jajakallah Khiran
shah mohammod
18 Dec 2011jajakallaho khairan,jahed vai shoho hadi vaike mubarokbad
nooralam1639
19 Dec 2011zazak Allah Khair
শরিফুল ইসলাম
31 Dec 2011মাশাল্লাহ, দেখেতো খেতে ইচ্ছা করতেছে খুব। কিন্তু রান্না করে দিবে কে এখানে। তাই এখন খাওয়া হচ্ছেনা। তবে ভবিষ্যতে বেগুন ভাজি বা তরকারী খাব ইনশাল্লাহ। জাজাকাল্লাহ খাইর। আল্লাহ হাফেজ।
begamrokeya
3 Jan 2012মাশাআল্লাহ, তাবারাকাল্লাহ!
আব্দুল্লাহিল হাদী
17 Jan 2012মাশাআল্লাহ। জাযাকিল্লাহ। এই ব্লগ ভিজিট করতে আসায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
শাফিনুর
16 Nov 2012আমি তো আগে থেকে বেগুন পছন্দ করি কিন্তু বেগুনের গুণাগুণ জানার পর আরো বেশি বেশি বেগুন খেতে ইচ্ছা করে