
মাহে রামাযান:
অসংখ্য কল্যাণের হাতছানি
ভূমিকা: খর তপ্ত জমিন। মানুষ-জন, পশু-পাখি, গাছ-পালা, তৃণ-লতা সব কিছু একপশলা বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছে। হঠাৎ আকাশ জুড়ে শুরু হল মেঘের আনাগোনা। মুশলধারে বৃষ্টি বর্ষণ হল। প্রাণে প্রাণে জাগল জীবনের স্পন্দন। আবার কলকাকলিতে ভরে উঠল পৃথিবী। মাহে রামাযানের উদাহরণ অনেকটা এমনই। পৃথিবী যখন পাপ-পঙ্গীলতায় ভারি হয়ে উঠে। গুমোট অস্থিরতায় সমগ্র পৃথিবী কাঁপতে থাকে। ঠিক এমন সময় আল্লাহ তায়ালা মাহে রামাযানকে উপহার হিসেবে দেন বিশ্ববাসীর নিকট। যেন তারা তাদের পেছনে ফেলে আসা পাপরাশীকে সিয়াম, কিয়াম ও অন্যান্য নেকী অর্জনের মাধ্যমে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে নিতে পারে। আল্লাহর অশেষ রহমতের বারি ধারায় সিক্ত হয়ে শুরু করতে পারে নতুন ভাবে পথ চলা।
প্রিয় ভাই, এই রামাযান আমাদের মাঝে সমাগত। নিঃসন্দেহে রামাযান মুসলমানদের জন্য এক বিরাট কল্যাণের মাস। এ মাসে মুসলমানদের জন্য রোযা পালন করা ফরয। এ রোযা ইসলামের ৫টি রোকন (স্তম্ভ) এর মধ্যে অন্যতম। আল্লাহ তাআলা এ মাসে মানব জাতির পথ প্রদর্শনের জন্য মহা গ্রন্থ আল কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ করেছেন। এ মাসে রয়েছে এমন একটি রাত যা এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আর তা হল, রামাযানের শেষ দশকের কদরের রাত বা শবে কদর। কুরআন-সুন্নায় এ মাসের মর্যাদা এবং এতে ইবাদত-বন্দেগী করার ব্যাপারে অনেক আলোচনা এসেছে। নিম্নে এ প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদীসে আলোকে অতি গুরুত্ব পূর্ণ একটি আলোচনা উপস্থাপনা করা হল। শেষে রয়েছে রামাযানকে কেন্দ্র করে আমাদের সামাজে প্রচলিত কতিপয় বিদআত ও সুন্নাত বিরোধী কার্যকলাপ।
আসুন, আমরা রামাযানের যথাযথ আদব রক্ষা করে সিয়াম সাধনা করে আল্লাহ তায়ালার নিকট গুনাহ-খাতা মোচন করিয়ে নেই এবং সেই সাথে দু হাত ভরে উপার্জনের চেষ্টা করি পরকালের পাথেয়। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।
রামাযান মাসের মর্যাদা ও রোযার গুরুত্ব
১) মুসলমানদের জন্য রামাযানের রোযা রাখা ফরয:
রামাযান মাসে রোযা রাখা ফরজ হওয়ার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।” (সূরা বাকারা: ১৮৩)
২) রামাযান মাসে রোযা রাখা ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ:
ক) আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله ، وأن محمداً رسول الله ،وإقامة الصلاة ، وإيتاء الزكاة ، والحج، وصوم رمضان)
ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। লা ‘ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ তথা এ কথার স্বাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই এবং নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, হজ্জ আদায় করা এবং রামাযান মাসে রোযা রাখা।[1]
খ) আবু হুরায়রা (রাহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মানুষের সামনে ছিলেন এমতবস্থায় তাঁর নিকট এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল: ঈমান কী? তিনি উত্তরে বললেন:
الإيمان أن تؤمن بالله ، وملائكته ، وبلقائه ، ورسله، وتؤمن بالبعث
“ঈমান হল, আল্লাহ, তাঁর ফেরেশ্তাগণ, তাঁর সাথে স্বাক্ষাৎ হওয়াকে এবং তাঁর রাসূলগণকে বিশ্বাস করবে এবং সেই সাথে বিশ্বাস করবে মৃত্যুর পর পূণরুত্থানকে।” সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, ইসলাম কী? তিনি বললেন:
الإسلام أن تعبد الله ولا تشرك به وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة المفروضة وتصوم رمضان
ইসলাম হল: এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁর সাথে শির্ক করবে না, নামায পড়বে, ফরয যাকাত দিবে এবং রামাযান মাসে রোযা রাখবে।”
লোকটি পূণরায় জিজ্ঞেস করল, ইহসান কী? তিনি বললেন:
أن تعبد الله كأنك تراه ، فإن لم تكن تراه فإنه يراك
“ইহসান হল, এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তবে (এ মনোভাব রাখবে) যে তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন…।”[2]
গ) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক বেদুইনের কথোপকথন:
ত্বালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রাহ:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এক বেদুঈন আগমণ করল। তার মাথার চুল ছিল উসকো-খুশ্কো। লোকটি বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কী পরিমাণ নামায ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “পাঁচ ওয়াক্ত নামায। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল নামায পড়তে পার।”
লোকটি বলল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কী পরিমাণ রোযা ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “রামাযান মাসের রোযা। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল রোযা রাখতে পার।”
লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার উপর কী পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন?
বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্নকারীকে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান দান করলেন। অতঃপর লোকটি বলল: সে প্রভুর শপথ করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য দ্বারা সম্মানিত করেছেন, আমি অতিরিক্ত কোন কিছুই করব না এবং আল্লাহ তাআলা আমার উপর যা ফরয করেছেন তা থেকে কোন কিছুই কমও করব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “সে সত্য বলে থাকলে সফল হবে।” অথবা তিনি বলছেন: “সে সত্য বলে থাকলে জান্নাতবাসী হবে।”[3]
আব্দুল আলীম
1 Aug 2011জাযাকাল্লাহু খয়রান। সুন্দর পোষ্ট।আল্লাহ তায়ালা রমযানের মাধ্যমে আমাদের জীবনের সকল গুনাহ ভুলত্রটিকে যেন ক্ষমা করেদেন। এবং সিয়াম, কিয়াম ও তিলাওয়াতকে যেন সহজ ও কবুল করে নেন।
আব্দুল্লাহিল হাদী
2 Aug 2011আব্দুল আলীম ভাইকে মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। রামাযান হোক আমাদের জীবন পরিবর্তনের অঙ্গীকার। শুভেচ্ছা রইল।
Abdullahil Kafi
2 Aug 2011Shukran jazeeela for your great efforts. Ramadhan Mubarak to all. Was salamu alaikum wa rahmatullah.
আব্দুল্লাহিল হাদী
4 Aug 2011আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। রামাযানের শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ভাল রাখুন এই প্রত্যাশা রইল।
Anonymous
3 Aug 2011جزاك الله خيرا على ما قدمت من خدمة جليلة للإسلام والمسلمين ولا تحرمنا من خبراتك الدعوة إلى الله وشكراً – نور العالم عبد الصبور
আব্দুল্লাহিল হাদী
13 Aug 2011بارك الله فيك و كتب الله لك الأجر ونرجو من فضيلتكم التواصل بنا قدر المسنطاع
বোরহান
4 Aug 2011সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে অনেক অনেক মুবারক বাদ
আব্দুল্লাহিল হাদী
13 Aug 2011আপনার মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। রামাযানের শুভেচ্ছা।
abdullah shahed
4 Aug 2011جزاك الله خيرا
আব্দুল্লাহিল হাদী
13 Aug 2011بارك الله فيك
Anonymous
5 Aug 2011aaponake oneeeek dhonnobad
আব্দুল্লাহিল হাদী
13 Aug 2011আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। রামাযানের শুভেচ্ছা।
Anonymous
6 Aug 2011sundar lekhar jonno dhonnobad. aamar jonno khas kore dowa korben
tutorialmaker
6 Aug 2011দিনে দিনে সাইটি আমার কাছে আরো বেশী তথ্যপূর্ণ্য হয়ে উঠছে।অনেক আগেই ফলোয়ার হয়েছি তাই প্রতিটি পোষ্ট ইমেইলে নিয়মিত পাই।ইসলামিক তথ্যপূর্ণ্য এমন একটি সাইট সবাইকেই বুকমার্ক করে রাখা উচিত বলে মনে করি।
আব্দুল্লাহিল হাদী
7 Aug 2011আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আব্দুল্লাহিল হাদী
7 Aug 2011জাযাকাল্লাহু খাইরান।
আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সুস্থতার সাথে সব সময় দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন।